ঢাকা ০৯:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের আড়ালে উপজাতিদের করা হচ্ছে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:০১:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৩
  • 326

দৈনিক ৭১ সংবাদ
২৩শে এপ্রিল, ২০২৩।

বিশেষ প্রতিবেদন : আজ থেকে প্রায় দুই দশক আগেও খাগড়াছড়ি জেলার সাজেক ইউনিয়নের খেয়াং, বম, পাংখু, লুসাই সহ ২০টি গ্রামে খ্রিস্টান ধর্মের চিহ্ন মাত্র ছিলো না। এ-ই ২০ টি গ্রামে প্রায় ১০ হাজার উপজাতির বাস। স্ব স্ব জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি পালন করতো তারা। তবে এখন এদের অধিকাংশই ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়ে গেছেন। সাজেক ইউনিয়নের আকর্ষণীয় রুইলুই পর্যটন কেন্দ্রে গড়ে উঠেছে গির্জা। এর অধীনেই এখানে খ্রিস্টান ধর্ম সম্প্রসারিত হচ্ছে। তবে গির্জার ধর্মপ্রচারক ময়তে লুসাইয়ের ধর্মান্তর বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমরা কেবল নিজ ধর্মের অনুসারীদের বাইবেলের শিক্ষা দিয়ে থাকি। বান্দরবানের চিম্বুক, শৈল প্রপাত এলাকায় বম, ত্রিপুরা, ও নাইক্ষংছড়িতে খ্রিস্টান বানানো হচ্ছে চাকদের। এই জেলার শুধু রোয়াংছড়ি উপজেলায় একশ’ এর বেশি গির্জা আছে। রুমা-থানচি উপজেলার গভীরে একেকটি পাড়া কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে গির্জা।

পার্বত্য অঞ্চলের তিন জেলায় এক সময় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাধিক্য থাকলেও ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে সেই হিসেব। ধর্ম প্রচার ও আর্থিক প্রলোভনে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছেন অনেকেই। একই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গির্জার সংখ্যাও। গত দুই দশকেই পার্বত্য এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১৫ হাজারে বেশি পাহাড়ি উপজাতিকে বানানো হয়েছে খ্রিস্টান। ওই এলাকার মানুষের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে তাদের ধর্মান্তরিত করার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে মিশনারি ও তাদের প্রভাবিত এনজিওগুলো। স্বাস্থ্যসেবা ও মানবসেবার নাম করে এসব এনজিও তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

এনজিওগুলোর মাধ্যমে কি পরিমাণ অর্থ ওই এলাকায় বিনিয়োগ করা হচ্ছে তার কোন সঠিক হিসাব সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কাছেও নেই। আর সেই সুযোগে সেবার আড়ালে অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করা হচ্ছে। স্থানীয় আইন-শৃংখলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৫৪টি উপজাতি পরিবারকে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। এসব পরিবারের ৪৭৫ জন সদস্য এই ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জানা যায়, এসব এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা অনগ্রসর শ্রেণির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দরিদ্র পরিবারগুলোকে টার্গেট করে খ্রিস্টান মিশনারি ও তাদের পরিচালিত এনজিওগুলো। খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নানা দিক থেকে বঞ্চিত ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে অর্থের প্রলোভন ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। স্থানীয়রা জানান, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে বসবাস করে ১৩টি ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা, চরম দারিদ্র্য, ক্ষুধা, মহামারী, অপুষ্টি ও স্যানিটেশন তাদের নিত্যদিনের সমস্যা। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বার্থসিদ্ধি করছে এনজিওগুলো। স্থানীয় আইন-শৃংখলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় বছর পার্বত্য এলাকায় ১৫৪টি পরিবারের ৪৭৫জন সদস্যকে খ্রিস্টান ধর্মে ধমান্তরিত করা হয়েছে। এসব পরিবারকে বিভিন্ন এনজিও ও ব্যক্তিরা নানাভাবে প্রভাবিত করেছে।

তাদের মধ্যে খাগড়াছড়িতে ১৪৪টি পরিবারের ৩৪২জন সদস্য ও বান্দরবানে ১০টি পরিবারের ৩৩ জন। রাঙামাটিতে ধর্মান্তরিত হলেও এর সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেনি কেউ।

রাষ্ট্রীয় এক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ বছরে ওই এলাকায় ১৫ হাজার উপজাতি জনগোষ্ঠী খ্রিস্টান হয়ে গেছেন। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় নিয়ামক ভূমিকা পালন করছে এনজিও ও মিশনারি প্রতিষ্ঠানগুলো। ওই তিন জেলাতেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য গির্জা। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলায় ৭৩টি গির্জা রয়েছে। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এ জেলায় চার হাজার ৩১টি পরিবার খ্রিস্টান বানানো হয়েছে বলে জানা যায়। বান্দরবান জেলায় গির্জা রয়েছে ১১৭টি। এখানে একই সময়ে খ্রিস্টান হয়েছে ছয় হাজার ৪৮০টি উপজাতি পরিবার।

রাঙ্গামাটিতে চারটি গির্জা খ্রিস্টান বানিয়েছে এক হাজার ৬৯০টি পরিবারকে। পাহাড়ি যেসব জনগোষ্ঠীর লোকসংখ্যা কম, তাদের প্রায় শতভাগ খ্রিস্টান হয়ে গেছে অনেক আগেই। এমন একটি উপজাতি পাংখু। যাদের পুরো জনগোষ্ঠীই খ্রিস্টান হয়ে গেছে। নিজেদের ধর্ম বদলের সাথে সাথে ইংরেজিকেও তারা নিজেদের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। জানা যায়, এনজিও’র নাম ধারণ করে খ্রিস্টানরা এই দুর্গম এলাকায় হাসপাতাল, বিনোদন কেন্দ্র, গির্জা ইত্যাদি গড়ে তুলেছে। বহুজাতিক কোম্পানির আর্থ-রাজনৈতিক স্বার্থে এবং অসহায়, নিঃস্ব, নিরক্ষর মানুষকে সেবা করার নামে নতুন ধর্মে দীক্ষিত করছে। আর এদের বাজেটের ৯০ শতাংশ অর্থ খ্রিস্টান হওয়ার সম্ভাবনাময় ব্যক্তিদের স্বার্থে ব্যয় হয়। ধর্মান্তরিত করতে যেসব এনজিও কাজ করছে তার মধ্যে রয়েছে- অ্যাডভানটেজ ক্রুশ অব বাংলাদেশ, হিউম্যানিট্রেইন ফাউন্ডেশন, খ্রিস্টান কমিশন ফর ডেভলপমেন্ট বাংলাদেশ (সিসিডিবি), ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টান ক্রুশ, ডানিডা, ওয়ার্ল্ড ভিশন, কৈনানিয়া, শান্তিরানী ক্যাথলিক চার্চ, গ্রিন হিল, গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থা (গ্রাউস), মহামনি শিশু সদন, জাইনপাড়া আশ্রম, তৈদান, আশার আলো, তৈমু প্রভৃতি সংগঠন। এনজিওগুলোর নানা প্রলোভনে পড়ে দলে দলে ধর্মান্তরিত হচ্ছে পাহাড়ি উপজাতি জনগোষ্ঠী।

এছাড়াও ইউএনডিপি ও ইউনিসেফের যৌথ অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন রেজিস্টার্ড ও নন-রেজিস্টার্ড এনজিও’র মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের আড়ালে মূলত খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার কর্মকা- চালানো হচ্ছে।

এনজিওদের এসব কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা। পাশাপাশি এ এনজিওদের কর্মকা- ঘনিষ্ঠভাবে মনিটরিং-এর দাবি তুলেছেন তারা। এর আগে ২০১৫ সালের জুন মাসে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের হলরুমে ধর্মান্তরিত করার ঘটনায় গণশুনানিও অনুষ্ঠিত হয়। তারও আগে ২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিস্টান মিশনারীদের বিরুদ্ধে ধর্মান্তর করণের অভিযোগ এনেছে বান্দরবানের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চাক সম্প্রদায়ের নেতারা। এ বিষয়ে ২০১৪ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি স্মারকলিপিও প্রদান করেন তারা। ৩২ জন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নেতার স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়াও ৬টি মন্ত্রণালয়, মানবাধিকার সংস্থা, বিজিবি-পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা চেয়ারম্যান, ওসিসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ সমিতি এবং ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে অনুলিপি পাঠানো হয়। স্মারকলিপির সাথে নব্য খ্রিস্টান প্রচারক চাক ছেলে-মেয়েদের একটি নামের তালিকাও সংযুক্ত করা হয়।

এ বিষয়ে চাক সম্প্রদায়ের নেতা ছানু অং চাক, বাচাচিং চাক, নাইন্দা অং চাক, ফোছা অং চাক, অংথোয়াইচিং চাক জানান, চাক ছেলে মেয়েদেরকে ধর্মান্তরিত করার কারণে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ধর্মীয় দাঙ্গা হাঙ্গামার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

২০১১ জুন মাসে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় কোরআন শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র সম্প্রসারণের সম্ভাব্যতা যাচাই, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ সংক্রান্ত সুপারিশ প্রণয়ন কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, দু’দশক আগে এ জেলায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যার দিকে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও এখন তারা তৃতীয় স্থানে চলে এসেছে। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের তথ্য অনুযায়ী, ১৯১৮ সালে বান্দরবানে প্রথম খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার শুরু হয়। পরে ১৯২৮ সালে বম সম্প্রদায় প্রথম খ্রিস্টানধর্ম গ্রহণ করে এরপর ত্রিপুরা,, খেয়াং, খুমিসহ অন্যান্য সম্প্রদায় খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ শুরু করে। এছাড়া মার্মা, পাংখোয়া সম্প্রদায়ের অনেকেই এখন খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারিকে অবাঞ্চিত ঘোষণা।

সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের আড়ালে উপজাতিদের করা হচ্ছে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত।

Update Time : ০৭:০১:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৩

দৈনিক ৭১ সংবাদ
২৩শে এপ্রিল, ২০২৩।

বিশেষ প্রতিবেদন : আজ থেকে প্রায় দুই দশক আগেও খাগড়াছড়ি জেলার সাজেক ইউনিয়নের খেয়াং, বম, পাংখু, লুসাই সহ ২০টি গ্রামে খ্রিস্টান ধর্মের চিহ্ন মাত্র ছিলো না। এ-ই ২০ টি গ্রামে প্রায় ১০ হাজার উপজাতির বাস। স্ব স্ব জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি পালন করতো তারা। তবে এখন এদের অধিকাংশই ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়ে গেছেন। সাজেক ইউনিয়নের আকর্ষণীয় রুইলুই পর্যটন কেন্দ্রে গড়ে উঠেছে গির্জা। এর অধীনেই এখানে খ্রিস্টান ধর্ম সম্প্রসারিত হচ্ছে। তবে গির্জার ধর্মপ্রচারক ময়তে লুসাইয়ের ধর্মান্তর বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমরা কেবল নিজ ধর্মের অনুসারীদের বাইবেলের শিক্ষা দিয়ে থাকি। বান্দরবানের চিম্বুক, শৈল প্রপাত এলাকায় বম, ত্রিপুরা, ও নাইক্ষংছড়িতে খ্রিস্টান বানানো হচ্ছে চাকদের। এই জেলার শুধু রোয়াংছড়ি উপজেলায় একশ’ এর বেশি গির্জা আছে। রুমা-থানচি উপজেলার গভীরে একেকটি পাড়া কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে গির্জা।

পার্বত্য অঞ্চলের তিন জেলায় এক সময় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাধিক্য থাকলেও ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে সেই হিসেব। ধর্ম প্রচার ও আর্থিক প্রলোভনে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছেন অনেকেই। একই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গির্জার সংখ্যাও। গত দুই দশকেই পার্বত্য এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১৫ হাজারে বেশি পাহাড়ি উপজাতিকে বানানো হয়েছে খ্রিস্টান। ওই এলাকার মানুষের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে তাদের ধর্মান্তরিত করার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে মিশনারি ও তাদের প্রভাবিত এনজিওগুলো। স্বাস্থ্যসেবা ও মানবসেবার নাম করে এসব এনজিও তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

এনজিওগুলোর মাধ্যমে কি পরিমাণ অর্থ ওই এলাকায় বিনিয়োগ করা হচ্ছে তার কোন সঠিক হিসাব সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কাছেও নেই। আর সেই সুযোগে সেবার আড়ালে অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করা হচ্ছে। স্থানীয় আইন-শৃংখলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৫৪টি উপজাতি পরিবারকে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। এসব পরিবারের ৪৭৫ জন সদস্য এই ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জানা যায়, এসব এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা অনগ্রসর শ্রেণির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দরিদ্র পরিবারগুলোকে টার্গেট করে খ্রিস্টান মিশনারি ও তাদের পরিচালিত এনজিওগুলো। খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নানা দিক থেকে বঞ্চিত ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে অর্থের প্রলোভন ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। স্থানীয়রা জানান, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে বসবাস করে ১৩টি ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা, চরম দারিদ্র্য, ক্ষুধা, মহামারী, অপুষ্টি ও স্যানিটেশন তাদের নিত্যদিনের সমস্যা। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বার্থসিদ্ধি করছে এনজিওগুলো। স্থানীয় আইন-শৃংখলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় বছর পার্বত্য এলাকায় ১৫৪টি পরিবারের ৪৭৫জন সদস্যকে খ্রিস্টান ধর্মে ধমান্তরিত করা হয়েছে। এসব পরিবারকে বিভিন্ন এনজিও ও ব্যক্তিরা নানাভাবে প্রভাবিত করেছে।

তাদের মধ্যে খাগড়াছড়িতে ১৪৪টি পরিবারের ৩৪২জন সদস্য ও বান্দরবানে ১০টি পরিবারের ৩৩ জন। রাঙামাটিতে ধর্মান্তরিত হলেও এর সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেনি কেউ।

রাষ্ট্রীয় এক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ বছরে ওই এলাকায় ১৫ হাজার উপজাতি জনগোষ্ঠী খ্রিস্টান হয়ে গেছেন। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় নিয়ামক ভূমিকা পালন করছে এনজিও ও মিশনারি প্রতিষ্ঠানগুলো। ওই তিন জেলাতেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য গির্জা। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলায় ৭৩টি গির্জা রয়েছে। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এ জেলায় চার হাজার ৩১টি পরিবার খ্রিস্টান বানানো হয়েছে বলে জানা যায়। বান্দরবান জেলায় গির্জা রয়েছে ১১৭টি। এখানে একই সময়ে খ্রিস্টান হয়েছে ছয় হাজার ৪৮০টি উপজাতি পরিবার।

রাঙ্গামাটিতে চারটি গির্জা খ্রিস্টান বানিয়েছে এক হাজার ৬৯০টি পরিবারকে। পাহাড়ি যেসব জনগোষ্ঠীর লোকসংখ্যা কম, তাদের প্রায় শতভাগ খ্রিস্টান হয়ে গেছে অনেক আগেই। এমন একটি উপজাতি পাংখু। যাদের পুরো জনগোষ্ঠীই খ্রিস্টান হয়ে গেছে। নিজেদের ধর্ম বদলের সাথে সাথে ইংরেজিকেও তারা নিজেদের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। জানা যায়, এনজিও’র নাম ধারণ করে খ্রিস্টানরা এই দুর্গম এলাকায় হাসপাতাল, বিনোদন কেন্দ্র, গির্জা ইত্যাদি গড়ে তুলেছে। বহুজাতিক কোম্পানির আর্থ-রাজনৈতিক স্বার্থে এবং অসহায়, নিঃস্ব, নিরক্ষর মানুষকে সেবা করার নামে নতুন ধর্মে দীক্ষিত করছে। আর এদের বাজেটের ৯০ শতাংশ অর্থ খ্রিস্টান হওয়ার সম্ভাবনাময় ব্যক্তিদের স্বার্থে ব্যয় হয়। ধর্মান্তরিত করতে যেসব এনজিও কাজ করছে তার মধ্যে রয়েছে- অ্যাডভানটেজ ক্রুশ অব বাংলাদেশ, হিউম্যানিট্রেইন ফাউন্ডেশন, খ্রিস্টান কমিশন ফর ডেভলপমেন্ট বাংলাদেশ (সিসিডিবি), ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টান ক্রুশ, ডানিডা, ওয়ার্ল্ড ভিশন, কৈনানিয়া, শান্তিরানী ক্যাথলিক চার্চ, গ্রিন হিল, গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থা (গ্রাউস), মহামনি শিশু সদন, জাইনপাড়া আশ্রম, তৈদান, আশার আলো, তৈমু প্রভৃতি সংগঠন। এনজিওগুলোর নানা প্রলোভনে পড়ে দলে দলে ধর্মান্তরিত হচ্ছে পাহাড়ি উপজাতি জনগোষ্ঠী।

এছাড়াও ইউএনডিপি ও ইউনিসেফের যৌথ অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন রেজিস্টার্ড ও নন-রেজিস্টার্ড এনজিও’র মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের আড়ালে মূলত খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার কর্মকা- চালানো হচ্ছে।

এনজিওদের এসব কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা। পাশাপাশি এ এনজিওদের কর্মকা- ঘনিষ্ঠভাবে মনিটরিং-এর দাবি তুলেছেন তারা। এর আগে ২০১৫ সালের জুন মাসে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের হলরুমে ধর্মান্তরিত করার ঘটনায় গণশুনানিও অনুষ্ঠিত হয়। তারও আগে ২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিস্টান মিশনারীদের বিরুদ্ধে ধর্মান্তর করণের অভিযোগ এনেছে বান্দরবানের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চাক সম্প্রদায়ের নেতারা। এ বিষয়ে ২০১৪ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি স্মারকলিপিও প্রদান করেন তারা। ৩২ জন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নেতার স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়াও ৬টি মন্ত্রণালয়, মানবাধিকার সংস্থা, বিজিবি-পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা চেয়ারম্যান, ওসিসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ সমিতি এবং ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে অনুলিপি পাঠানো হয়। স্মারকলিপির সাথে নব্য খ্রিস্টান প্রচারক চাক ছেলে-মেয়েদের একটি নামের তালিকাও সংযুক্ত করা হয়।

এ বিষয়ে চাক সম্প্রদায়ের নেতা ছানু অং চাক, বাচাচিং চাক, নাইন্দা অং চাক, ফোছা অং চাক, অংথোয়াইচিং চাক জানান, চাক ছেলে মেয়েদেরকে ধর্মান্তরিত করার কারণে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ধর্মীয় দাঙ্গা হাঙ্গামার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

২০১১ জুন মাসে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় কোরআন শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র সম্প্রসারণের সম্ভাব্যতা যাচাই, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ সংক্রান্ত সুপারিশ প্রণয়ন কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, দু’দশক আগে এ জেলায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যার দিকে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও এখন তারা তৃতীয় স্থানে চলে এসেছে। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের তথ্য অনুযায়ী, ১৯১৮ সালে বান্দরবানে প্রথম খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার শুরু হয়। পরে ১৯২৮ সালে বম সম্প্রদায় প্রথম খ্রিস্টানধর্ম গ্রহণ করে এরপর ত্রিপুরা,, খেয়াং, খুমিসহ অন্যান্য সম্প্রদায় খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ শুরু করে। এছাড়া মার্মা, পাংখোয়া সম্প্রদায়ের অনেকেই এখন খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন।