ঢাকা ০৮:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যস্ত সময় গদখালির ফুল চাষিরা

  • Reporter Name
  • Update Time : ১০:১৫:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • 32

বেনাপোল প্রতিনিধি: : ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, আনন্দ কিংবা কষ্ট সব কিছু লুকিয়ে থাকে ফুলের মধ্যে। তাই ফেব্রুয়ারি মানেই তো ফুলের মাস। এ মাসেই বসন্ত উৎসব, বিশ্ব ভালো বাসা ও মাতৃভাষা দিবস। অন্যান্য সব মাসের তুলনায় ফ্রেয়ারী মাসে বাংলাদেশে ফুলের চাহিদা থাকে অনেক বেশি।দেশের গোলাপ ফুলের চাহিদার সিংহভাগ আসে যশোরের গদখালি থেকে।

শুধু গোলাপ নয় এই এলাকা জুড়ে অনেক ধরনের ফুল চাষ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও ফুলের দাম বেশি পাওয়ায় এবারে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এই পাঁচ দিবসে প্রায় (১০০) কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে দিন রাত ফুল ও ফুলগাছের ফুলের চাহিদা মেটাতে দিন-রাত বাগানে কাজ করছেন গদখালির ফুলচাষিরা।

আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে গদখালি ফুল চাষিরা বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালো বাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের জন্য বাজারে ফুল সরবরাহ করে আসছেন। ইতোমধ্যে প্রতিদিন সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে. দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ফুল কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন ঝিকর গাছার গদখালি বাজারে।

দেশের সর্ব বৃহৎ পাইকারী ফুলের বাজার এই গদখালী। এই কারণে গদখালী কে দেশের ফুলের রাজ্য বা রাজধানী বলা হয়ে থাকে। যশোর শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঝিকরগাছা উপজেলার ৭৫ টি গ্রামের মাঠের জমিতে চাষ করা হয় হরেক রকমের ফুল।

গদখালির গ্রাম গুলোর রাস্তার দুইপাশে দিগন্ত বিস্তৃত জমিতে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুলের সমাহার দেখে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে থাকত হয়। যশোর-বেনাপোল রোড ছেড়ে ডানে, বায়ের গ্রমিগুলোয় ঢুকে কিছুদুর এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে দিগন্ত জোড়া ফুলের মাঠ।রজনীগন্ধা, গ্লাডিওল্যাস, গোলাপ আর গাঁদা ফুল চাষ হয় এসব গ্রামে। প্রতিবছর ৫০০কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হয় এসব মাঠ থেকে।

শত শত বিঘা জমি নিয়ে গাঁদা, গোলাপ, গ্যাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, ডেইজ জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ আরো বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ। এবছরে ফুলের রাজ্যে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে টিউলিপ ফুল। শীত প্রধান দেশের ফুল টিউলিপ। চাহিদা বেশি থাকায়এবছরেও চাষ করা হয়েছে বেশি।
ফ্লওয়ার সোসাইটির সভাপতি জনাব আব্দুর রহমান বলেন অন্যান্যবছরের তুলনায় চলতি বছরে ফুলের দাম ভালো, তায় ফুল চাষকে আরও ব্যাপকতাও বেগবান করতে সকলকে লোস্ব-ভূমিকা রাখার আহবান করেন।

যশোররে ঝকিরগাছা উপজলো কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাসুম হোসেন পলাশ জানান, উপজেলার গতখালীতে এবার সাড়ে ৬৩০ হাজার হেক্টর জমিতে ফুল চাষের আওতায় আনা হয়েছে। এ গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন এই ফুল চাষ করে।

গদখালির কয়েকটি গ্রাম ও বাজার ঘুরে দেখা গেছে- সড়কের পাশে, বাড়ির সামনে এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের ফাঁকা জায়গাতে ফুলের চাষ করা হয়েছে। দুপুরের পর প্রতিটি বাগানেই শ্রমিকদের ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। ফুল কাটা, বাছাই, ভেজানো, বাঁধা সবকিছুই কৃষক সন্ধ্যার আগেই শেষ করেন। কারণ, সকাল-সন্ধ্যার পরই জমে ওঠে গদ খালির ফুলের বাজার। ব্যবসায়ীরা এই ফুল কিনে দেশের সর্ববৃহত ফুল মার্কেট ঢাকার শাহবাগে সরবরাহ করেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহীসহ সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফুল সরবরাহ করে আসছেন পাইকাররা।

বিরলিয়া গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯০ সালে ঢাকার কয়েকজন যুবক অন্যের জমি লিজ নিয়ে এই এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে প্রথম গোলাপ চাষ শুর“ করেন। ফলন ভালো আর ওই যুবকদের সফলতা দেখে স্থানীয়রাও ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ শুর করেন। খুব কম সময়ের মধ্যে গ্রামটিতে গোলাপের চাষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফুলের বাগানে দেখা হয় কৃষক শের আলি ও আজিজুর সদ্দারের সঙ্গে।তিনি বলবে পূরণ করে বিরলিয়ার উৎপাদিত ফুল। আসছে ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত বরণ, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে এ অঞ্চলের ফুলচাষিরাকমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন।

সফল ফুল চাষী জবেদা এবং সাজেদা খাতুন বলেন, কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হওয়ায় অসংখ্য দর্শনার্থী বিরলিয়ার ফুল বাগান দেখতে আসেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Jibon Da

জনপ্রিয়

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারিকে অবাঞ্চিত ঘোষণা।

ব্যস্ত সময় গদখালির ফুল চাষিরা

Update Time : ১০:১৫:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

বেনাপোল প্রতিনিধি: : ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, আনন্দ কিংবা কষ্ট সব কিছু লুকিয়ে থাকে ফুলের মধ্যে। তাই ফেব্রুয়ারি মানেই তো ফুলের মাস। এ মাসেই বসন্ত উৎসব, বিশ্ব ভালো বাসা ও মাতৃভাষা দিবস। অন্যান্য সব মাসের তুলনায় ফ্রেয়ারী মাসে বাংলাদেশে ফুলের চাহিদা থাকে অনেক বেশি।দেশের গোলাপ ফুলের চাহিদার সিংহভাগ আসে যশোরের গদখালি থেকে।

শুধু গোলাপ নয় এই এলাকা জুড়ে অনেক ধরনের ফুল চাষ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও ফুলের দাম বেশি পাওয়ায় এবারে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এই পাঁচ দিবসে প্রায় (১০০) কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে দিন রাত ফুল ও ফুলগাছের ফুলের চাহিদা মেটাতে দিন-রাত বাগানে কাজ করছেন গদখালির ফুলচাষিরা।

আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে গদখালি ফুল চাষিরা বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালো বাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের জন্য বাজারে ফুল সরবরাহ করে আসছেন। ইতোমধ্যে প্রতিদিন সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে. দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ফুল কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন ঝিকর গাছার গদখালি বাজারে।

দেশের সর্ব বৃহৎ পাইকারী ফুলের বাজার এই গদখালী। এই কারণে গদখালী কে দেশের ফুলের রাজ্য বা রাজধানী বলা হয়ে থাকে। যশোর শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঝিকরগাছা উপজেলার ৭৫ টি গ্রামের মাঠের জমিতে চাষ করা হয় হরেক রকমের ফুল।

গদখালির গ্রাম গুলোর রাস্তার দুইপাশে দিগন্ত বিস্তৃত জমিতে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুলের সমাহার দেখে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে থাকত হয়। যশোর-বেনাপোল রোড ছেড়ে ডানে, বায়ের গ্রমিগুলোয় ঢুকে কিছুদুর এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে দিগন্ত জোড়া ফুলের মাঠ।রজনীগন্ধা, গ্লাডিওল্যাস, গোলাপ আর গাঁদা ফুল চাষ হয় এসব গ্রামে। প্রতিবছর ৫০০কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হয় এসব মাঠ থেকে।

শত শত বিঘা জমি নিয়ে গাঁদা, গোলাপ, গ্যাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, ডেইজ জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ আরো বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ। এবছরে ফুলের রাজ্যে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে টিউলিপ ফুল। শীত প্রধান দেশের ফুল টিউলিপ। চাহিদা বেশি থাকায়এবছরেও চাষ করা হয়েছে বেশি।
ফ্লওয়ার সোসাইটির সভাপতি জনাব আব্দুর রহমান বলেন অন্যান্যবছরের তুলনায় চলতি বছরে ফুলের দাম ভালো, তায় ফুল চাষকে আরও ব্যাপকতাও বেগবান করতে সকলকে লোস্ব-ভূমিকা রাখার আহবান করেন।

যশোররে ঝকিরগাছা উপজলো কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাসুম হোসেন পলাশ জানান, উপজেলার গতখালীতে এবার সাড়ে ৬৩০ হাজার হেক্টর জমিতে ফুল চাষের আওতায় আনা হয়েছে। এ গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন এই ফুল চাষ করে।

গদখালির কয়েকটি গ্রাম ও বাজার ঘুরে দেখা গেছে- সড়কের পাশে, বাড়ির সামনে এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের ফাঁকা জায়গাতে ফুলের চাষ করা হয়েছে। দুপুরের পর প্রতিটি বাগানেই শ্রমিকদের ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। ফুল কাটা, বাছাই, ভেজানো, বাঁধা সবকিছুই কৃষক সন্ধ্যার আগেই শেষ করেন। কারণ, সকাল-সন্ধ্যার পরই জমে ওঠে গদ খালির ফুলের বাজার। ব্যবসায়ীরা এই ফুল কিনে দেশের সর্ববৃহত ফুল মার্কেট ঢাকার শাহবাগে সরবরাহ করেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহীসহ সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফুল সরবরাহ করে আসছেন পাইকাররা।

বিরলিয়া গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯০ সালে ঢাকার কয়েকজন যুবক অন্যের জমি লিজ নিয়ে এই এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে প্রথম গোলাপ চাষ শুর“ করেন। ফলন ভালো আর ওই যুবকদের সফলতা দেখে স্থানীয়রাও ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ শুর করেন। খুব কম সময়ের মধ্যে গ্রামটিতে গোলাপের চাষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফুলের বাগানে দেখা হয় কৃষক শের আলি ও আজিজুর সদ্দারের সঙ্গে।তিনি বলবে পূরণ করে বিরলিয়ার উৎপাদিত ফুল। আসছে ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত বরণ, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে এ অঞ্চলের ফুলচাষিরাকমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন।

সফল ফুল চাষী জবেদা এবং সাজেদা খাতুন বলেন, কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হওয়ায় অসংখ্য দর্শনার্থী বিরলিয়ার ফুল বাগান দেখতে আসেন।