দৈনিক একাত্তর সংবাদ
নিউজ ডেস্ক
১৬ই জানুয়ারি ২০২৩।
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরীতে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয় কাজির দেউড়ি এলাকার নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে। আজ ১৬ই জানুয়ারি বেলা আড়াইটা থেকে বিএনপি অফিসের সামনে সমাবেশে জড়ো হতে থাকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
হঠাৎ করেই চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ি হঠাৎ পরিণত হল রণক্ষেত্রে। কাজির দেউড়ি মোড় থেকে শুরু করে নেভাল ছাড়িয়ে সিআরবি এলাকা পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীরা ভাঙচুর চালিয়েছে অসংখ্য গাড়িতে, আগুন দিয়েছে পুলিশের একটি গাড়িতে। এ সময় সংঘর্ষে অন্তত পাঁচ পুলিশসদস্য আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকাজুড়ে। গাড়িচলাচলও বন্ধ হয়ে যায় ওই এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মূলত ওই মিছিলটি থেকেই কাজির দেউড়ি মোড়ে হঠাৎ ভাঙচুর শুরু করে নেতাকর্মীরা। এর একপর্যায়ে ওই স্থানে আগে থেকে অপেক্ষমাণ পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে বিএনপি নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়তে থাকে। পুলিশও বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বিএনপির কর্মীরা। হামলা চালানো হয় কাজীর দেউড়ি পুলিশ বক্সেও। হোটেল রেডিসন ব্লুর সামনে পুলিশের আরও একটি গাড়িতেও তারা হামলা করে। এতে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়। তবে পুলিশ দাবি করেছে, সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।
এদিকে বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন, পুলিশের পিটুনিতে তাদের অন্তত ১৫ জন কর্মী আহত হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সহ দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ বিকাল ৩ টায় নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে নূর আহমদ সড়কে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ছিল। সমাবেশ চলাকালে কাজীর দেউড়ি মোড়ে মিছিল আসার সময় পুলিশী বাধা ও হামলার মুখে পড়ে। পুলিশের লাঠিচার্জ ও গুলিতে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়। তবে পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।’
কাজির দেউড়ি থেকে সিআরবি দিয়ে যাওয়া অসংখ্য গাড়ি ভাঙচুরের শিকার হয়েছে বিএনপির কর্মীদের ছোঁড়া এলোপাতাড়ি ইটপাটকেলে। এর মধ্যে ছিল চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলমের গাড়িও (চট্টমেট্রো গ-১২-৪৪১১)। আকস্মিক এমন ঘটনায় হতবাক ডা. জাহাঙ্গীর আলম ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘এটা কোনো পলিটিক্যাল মুভমেন্ট হতে পারে না। আমার কাছে এটা আন্দোলনের নামে রীতিমতো ছিনতাইকারীদের অপকর্ম বলে মনে হয়েছে। নিজের চোখে দেখেছি, সাধারণ যাত্রীদের বহনকারী গাড়িও তারা উন্মাদের মতো ভাঙচুর করছিল।’
ওই গাড়িতে থাকা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও দৈনিক সমকালের সিনিয়র সাব-এডিটর নাসিরউদ্দিন হায়দার বলেন, ‘লাভলেন থেকে স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশ দিয়ে সিআরবির দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ বিএনপির একদল সন্ত্রাসী অতর্কিত গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় আমরা বিএনপির সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হই। ওরা গাড়িতে পাথর ও ইট মেরে কাঁচ ভাঙচুর করে। আমরা কোনোমতে প্রাণ নিয়ে পেছনে ফিরে আসি। যে বড় বড় পাথর ওরা মারছিল, কাঁচ ভেঙ্গে একটা ভেতরে ঢুকলে আমরা শেষ হয়ে যেতাম।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ জোন) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের গাড়িতে হামলা করে তারা (বিএনপি নেতাকর্মীরা)। বিনা উস্কানিতে তারা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গুরুতর আহত হয়েছেন পুলিশের ৪ জন ও অন্তত ১৫ জনের মতো আহত হয়েছে। তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন।’