৭১ সংবাদ অনলাইন, ১ লা এপ্রিল , ২০২৪।
নিজস্ব প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণে ৪৪ টি শতবর্ষী গাছ কাটার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ‘গাছ বাঁচাও, চট্টগ্রাম বাঁচাও’ স্লোগান নিয়ে সোমবার বিকেলে টাইগারপাস মোড়ে সমাবেশ করেছে নাগরিক সমাজ। গাছ কেটে র্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন নাগরিক সমাজ । চট্টগ্রামের সমাবেশ থেকে এই ঘোষণা আসে। সোমবার (১ লা এপ্রিল) গাছের নিচে সমাবেশ করেন নাগরিক সমাজ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এই সংগঠনের নেতৃত্বেই ২০১১ সাল থেকে টানা ১৫ মাসের আন্দোলনে সিআরবিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে হাসপাতাল নির্মাণের প্রকল্প বাতিল হয়েছিল।
চট্টগ্রামের টাইগারপাস থেকে সিআরবিমুখি পাহাড়ি রাস্তাটির মাঝের ঢালে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণ করতে চায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
সেজন্য জমি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে রেলওয়ের কাছে এবং পাহাড়ের ঢালে থাকা ৪৪টি গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে বন বিভাগের কাছে আবেদনও করা হয়েছে।
ওই আবেদন অনুমোদন পেলে সেখানে তিন ডজনের বেশি শতবর্ষী গাছ কাটা পড়বে।
টাইগারপাস মোড়ে শতবর্ষী গাছের নিচে এই সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুর রহমান বলেন, “যদি র্যাম্প করতে হয়, অনেক জায়গা আছে এখানে। গাছ কেটে কেন করতে হবে? প্রকৃতি অক্ষুণ্ন রেখে যে কোনো কিছু করতে পারে, তারা সেটা করুক।” তিনি বলেন, “মূল লক্ষ্য এসব শতবর্ষী গাছ ও দ্বিতল রাস্তাটি নষ্ট করে সিআরবির পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংস করা। তারপর সিআরবিতে থাবা বসানো। শতবর্ষী গাছ কেটে নতুন চারা লাগানোর কোনো প্রয়োজন নেই।”
খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সভাপতি একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এই সড়ক শুধু চট্টগ্রামের নয়, দেশের ও বিশ্ব প্রকৃতির সম্পদ। যা সৃষ্টি করতে পারবেন না তা কেন ধ্বংস করছেন?” প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে এই সম্পদ রক্ষার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “অবিলম্বে সিডিএ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ঘোষণা দিন। নিউমার্কেট থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের অনেক বিকল্প আছে।”
সভাপতির বক্তব্যে নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজি বলেন, “এত বিকল্প থাকতে কেন গাছ কেটে আর দ্বিতল রাস্তা ধ্বংস করে র্যাম্প করতে হবে সেটা বোধগম্য নয়।”
পরিবেশবাদী সংগঠন পিপলস ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, “আমরা কেউ উন্নয়ন বিরোধী নই। এই র্যাম্প এখানে কেন? এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করার সময়ও শুরুর স্থান নিয়ে সমস্যা হয়। এটা দেওযানহাট থেকে শুরু করা যেত। তা না করে পাহাড় কেটে লালখান বাজার থেকেই শুরু করা হয়।
“নতুন করে গাছ রোপণ করবেন বলছেন সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী। আপনি কি এরকম একটি দ্বিতল সড়ক করতে পারবেন? এই শতবর্ষী গাছ ফিরিয়ে দিতে পারবেন?”
অধ্যাপক মো ইদ্রিস আলী বলেন, “যারা সিআরবি ধ্বংস করতে পারেনি তারা এখন সিআরবির প্রতিবেশ ধ্বংস করতে চায়। তারা শতবর্ষী গাছ কেটে চারা লাগাতে চায়। ধিক্কার জানানোর ভাষা আমাদের নেই।”
সাংবাদিক প্রীতম দাশের সঞ্চালনায় সমাবেশে সাংবাদিকদের সংগঠন বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি চৌধুরী ফরিদ, সাংবাদিক ঋত্তিক নয়ন, আমিনুল ইসলাম মুন্না ও সারোয়ার আমিন বাবু, নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম, খাল নদী রক্ষা কমিটির আলীউর রহমান, লেখিকা মোহছেনা ঝর্ণা, রাজনীতিবিদ সাজ্জাদ হোসেনও বক্তব্য রাখেন।