
৭১সংবাদ অনলাইন ডেস্ক, ০৩ নভেম্বর, ২০২৪।
আব্দুল্লাহ আল মোমিন।
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’—কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার এ লাইন যেন চিরসত্যের চরম শিখরে এ সময়ে। খাদ্যাভাব নেই, তবে অর্থের অভাব এসে ভর করেছে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে। ফলস্বরূপ প্রয়োজনীয় খাবার সামনে থাকলেও পকেটের দিকে তাকিয়ে শুধু দেখে যেতে হচ্ছে বাজারের সারিবদ্ধ দোকানগুলোর দিকে। বর্তমানের বাজারে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে নাকানি চুবানি খেতে হচ্ছে নিম্ন আয় থেকে সাধারণ মানুষের। এ সব মানুষের দুর্দিন ক্রমশই ঘনিয়ে আসছে নিত্যদিনের অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য ভারসাম্যহীনতার কারণে। বলছি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির ফলে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষের কথা। দ্রব্যমূল্যের চাপে অনেককেই ধার দেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে। কেউ কেউ খরচ কমাতে স্ত্রী সন্তানকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তারপরও সংসার চালাতে পারছেন না।
নিত্যপণ্যের বাজারে কোন ধরনের স্বস্তি ফেরাতে পারছে না এই অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৫ অক্টোবর ডিমের যে দাম বেঁধে দিয়েছে, তাতে এক ডজন ডিমের দাম কোনো ভাবেই ১৪৪ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এখনও ক্রেতারা ডজনে ২০-২১ টাকা বেশি দিচ্ছে। ডিমের ডজন ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা হয়েছিল সপ্তাহখানেক আগে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভারত থেকে ডিম আমদানি করা হয়। অভিযানও চালানো হয়। ন্যায্য মূল্যে ডিম বিতরণ করা হয়। তারপর ডিমের ডজন ১৬০ টাকায় নেমে আসে৷ তবে আজ (রবিবার ) দাম আবার ১৬৫ টাকায় উঠেছে।
সবজীর বাজারে পেঁপে, বেগুন আর বরবটি ছাড়া বেশির ভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০টাকা কেজিতে। বেড়েছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। ৯০ টাকার পেঁয়াজ এখন ১১০ টাকা, ২০০ টাকা কেজির বেগুন ২২০ টাকা, ৫৫ টাকার আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, আর কাঁচামরিচের কেজি ৩২০ টাকা।
মাছের রাজা ইলিশের কথা না হয় নাই বললাম। এক কেজি ইলিশ কিনতে গুনতে হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬৫০ টাকা। এ ছাড়া পাঙাশ, তেলাপিয়া, রুই-কাতলার দামও দুই মাস আগের তুলনায় কিছুটা বেশি।
মাংসের বাজার যেন উত্তপ্ত আগুন।ফার্মের মুরগির দাম বেডে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়, সোনালি জাতের মুরগির কেজি উঠেছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা। আর গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ টাকা।
সরকার পতনের ১৫ থেকে ২০ দিন পর পাম অয়েলের দর বাড়তে থাকে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, গত এক মাসে পাইকারি পর্যায়ে ড্রামপ্রতি পাম অয়েলের (২০৪ লিটার) দর বেড়েছে চার হাজার টাকা। ফলে প্রতি ড্রাম পাম অয়েলের দর ২৪ হাজার ৫০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৮ হাজার ৫০০ টাকার মতো। তাতে খুচরা বাজারে পাম অয়েলের দর লিটারে পাঁচ টাকার মতো বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৪৬ টাকায়। গত দুই সপ্তাহে চিনির বস্তা (৫০ কেজি) ২০০ টাকার মতো বেড়েছে। তাতে খুচরায় কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২৬ থেকে ১৩৫ টাকা।
এই লাগামহীন উর্ধগতি দামের মুলে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।সরকারি বেধে দেয়া কোন দামই তারা তোয়াক্কা করে না এই সিন্ডিকেট। আগের সরকারও এই শক্তিশালী সিন্ডিকেট বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি এখন অন্তর্বর্তী সরকার ও পারছে না এই শক্তিশালী সিন্ডিকেট বিরুদ্ধে।
নিত্যপণ্যের এমন আগুন-দামে ক্ষোভে ফুঁসছেন ভোক্তারা। নতুন সরকারের কাছে মানুষ যে প্রত্যাশা করেছিল, এর ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। সবকিছুর দাম বাড়ছে। মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। নিত্য পণ্যের দর না কমলে সাধারণ মানুষ এ সরকারের বিরুদ্ধেও রাস্তায় নামবে।